আগামী ২২ এপ্রিল থেকে সারা দেশে তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নির্বিঘœ করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অবসর নেয়ার কারণে আরো ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এ সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্য পদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী। সে হিসাবে একটি পদের জন্য প্রতিযোগিতা হবে ২৯ প্রার্থীর মধ্যে।
শিক্ষক নিয়োগের এই লিখিত পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এর আগে গত ১২ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: হাসিবুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাবিরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জল হোসাইন, এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক অসিত বরণ সরকার, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব শেখ ছালেহ আহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন ।
সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দেশের সব ডিআইজি, এসপিদের নিয়ে সভা করা এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তা ছাড়া প্রশ্নপত্র প্রণয়ন স্থানে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম জ্যামারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ জানান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাবিরুল ইসলাম জানান যে, রমজান এবং ট্রাফিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে ওএমআর শিট ও প্রশ্নপত্রের ট্রাংক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধানে সরবরাহ করতে অনুরোধ করেন।
এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক অসিত বরণ সরকার জানান, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পাদনের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। তিনি প্রতিটি কেন্দ্রে মেটাল ডিটেকটর স্থাপন এবং মহিলা পরীক্ষার্থীদের কানে পরিহিত কোনো ডিভাইস আছে কি না তা কঠোরভাবে যাচাই করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তা ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব প্রতিরোধে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ১১টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং পরীক্ষাসংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের নিমিত্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পরীক্ষার দিন প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্ট সংবলিত ট্রাংক ঢাকা হতে গ্রহণ, জেলার ট্রেজারিতে সংরক্ষণ এবং উত্তরপত্র ঢাকায় প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয়সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোনো জেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে বিভাগীয় কমিশনাররা প্রয়োজনীয়সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে পারেন এবং সুপ্ত ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
পরীক্ষার দিন প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ ফোর্স (মহিলা কেন্দ্রে মহিলা পুলিশসহ) নিয়োগের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগ ও পুলিশ অধিদফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া পরীক্ষার দিন কেন্দ্রগুলোতে টহল প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র্যাব মহাপরিচালক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। যেকোনো ধরনের ইলেকট্রোনিকস কমিউনিকেটিভ ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর সরবরাহ ও স্থাপন করার জন্য নিমিত্ত পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেয়ার জন্য জননিরাপত্তা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়াকিং জ্যামার স্থাপন করার নিমিত্ত বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।