ব্রিটিশ-বাংলাদেশি স্কুল শিক্ষিকা সাবিনা নেসাকে হত্যার দায়ে আলবেনিয়ার নাগরিক কোচি সেলামাজকে কমপক্ষে ৩৬ বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। ব্রিটেনের ওল্ড বেইলি আদালত ৮ এপ্রিল, শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেন। সাবিনা নেসা ছিলেন একজন গ্র্যাজুয়েট, প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা, যিনি সবার সাথে মজা করতে পছন্দ করতেন। চার বোনের পরিবারে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
ছোট বোন সাবিনার ব্যবহৃত অনেক কিছু এখন বড় বোন জেবিনা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন স্মৃতি হিসেবে। আদালতের শুনানিতে আসামি কোচি সেলামাজকে মুখোমুখি একবার দেখেছেন সাবিনার বোন ও পরিবারের সদস্যরা। হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে কোচি সেলামাজ ইস্টবোর্ণের গ্র্যান্ড হোটেলে চেক-ইন করে।
কোচি সেলামাজের সহিংস আচরণের কারণে তাঁকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর স্ত্রী এই হোটেলেই কাজ করতেন। হোটেলের কার পার্ক এলাকায় কোচি সেলামাজের স্ত্রী কোচির সাথে দেখা করেন। তখন কোচি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সাথে যৌনসহবাস করতে বলেন। তাঁর স্ত্রী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরেই কোচি একা গাড়ি চালিয়ে সাউথ-ইস্ট লন্ডনে এসে পৌঁছায়। কিডব্রুক এলাকায় গাড়ি থামিয়ে কোচি সেলামাজ স্থানীয় একটি সেইন্সবারিজ স্টোরে প্রবেশ করে। কোনো নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটাতে সেখান থেকে সে একটি রুটি বানানোর রোলিং পিন ক্রয় করে। এটিকেই সে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
অন্যদিনে একই সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা সাবিনা নেসা রওয়ানা হচ্ছিলেন তাঁর এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে। দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে সাবিনা নেসা ক্যাটোর পার্কের ভেতর দিয়ে শর্টকাটে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছিলেন। কোচি সেলামাইকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। তবে পার্কের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সে সাবিনার দিকে দৌড়ে গিয়ে হামলা করছে।
ধাতুর তৈরি এই ট্রাফিক ট্রায়াঙ্গল দিয়ে কোচি সেলামাইজ সাবিনাকে ৩৪ বার আঘাত করে। এরপর সাবিনাকে অজ্ঞান অবস্থায় সে সেখান থেকে বহন করে অন্যদিকে নিয়ে যায়। পরের দিন পার্কের এক কোনা থেকে সাবিনা নেসার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সেলামাজ তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
হত্যার পর কোচি সেলামাজ গাড়ি চালিয়ে ইস্টবোর্ণে ফিরে যায়। কান্ট্রি লেইন দিয়ে ফিরে যাবার পথে হত্যার সময় ব্যবহৃত অস্ত্রটি একটি নদীতে ফেলে দেয়। এক সপ্তাহ পর কোচি সেলামাইজকে গ্রেফতার গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ এবং টেলিফোনে একজন ইন্টারপ্রিটারের মাধ্যমে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে। কোচি সেলামাই একজন আলবেনিয়ান নাগরিক।
গত বছর সাবিনা নেসার হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর পরিবারের সদস্যরা সাবিনার জন্মদিন উদযাপন করেন। বেঁচে থাকলে সাবিনার বয়স তখন হতো ২৯ বছর। ব্রিটেনে জন্ম এবং বেড়ে উঠা স্কুল শিক্ষিকা সাবিনা নেছার বাংলাদেশের ঠিকানা বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার দাওরাই গ্রামে। তিনি পরিবারের সাথে সাউথ ওয়েষ্ট লন্ডনে বসবাস করতেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply