বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গত বুধবার লন্ডন বইমেলার বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশক টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস-এর প্রকাশিত Secret Documents on Bangabandhu - এর ৮, ৯ এবং ১০ খন্ডের আন্তর্জাতিক সংস্করণের মোড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।
বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ও যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম লন্ডন বইমেলায় আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস-এর পরিচালক জেরেমি নর্থ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং হাক্কানি পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন-এর উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ লন্ডন বইমেলায় অংশগ্রহণ করলো এবং জাতির পিতাকে উৎসর্গ করে ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’ স্থাপন করা হলো। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫,০০০-এরও বেশি প্রকাশক, লেখক এবং পুস্তক সমালোচক তাঁদের বই এবং অন্যান্য প্রকাশনা নিয়ে এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ড. গওহর রিজভী বলেন, লন্ডন বইমেলায় বঙ্গবন্ধু’র ওপর ঐতিহাসিক দলিল ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর আন্তর্জাতিক সংস্করণ প্রকাশ করার ফলে সারা বিশ্বের মানুষ পাকিস্তানের ২৩ বছর শাসনামলে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে লাঞ্ছিত, নির্যাতন এবং বারবার কারারুদ্ধ করা হয়েছিল তা আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবে।
ড. রিজভী আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে গোপন নথিগুলি পড়া ও এর ওপর গবেষণা করা প্রয়োজন।”
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বিশ্বখ্যাত প্রকাশক টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে লন্ডনে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর ১০টি খন্ডের আন্তর্জাতিক সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।”
হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্মেলনের স্থল ক্লারিজেস হোটেলে গত নবেম্বরে লন্ডন হাই কমিশনের উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐতিহাসিক দলিলের আন্তর্জাতিক সংস্করণের প্রথম সাত খন্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন। আজ টেলর এবং ফ্রান্সিস-এর সহযোগিতায় লন্ডন বইমেলায় ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর আরো তিনটি খন্ডের আন্তর্জাতিক সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।”
হাইকমিশনার আরো বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো লন্ডন বইমেলায় ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’ স্থাপন করেছি যেখানে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর আন্তর্জাতিক সংস্করণসহ বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর লেখা আরো অনেক গ্রন্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রকাশক ও দর্শকদের প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছি।
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’ বইটিকে যুক্তরাজ্যের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার ও গবেষণার জন্য এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ঐতিহাসিক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য কমিউনিটি লাইব্রেরিতে বিতরণ করার লক্ষ্যে আমরা এখন টেলর এবং ফ্রান্সিসের সাথে কাজ করছি।”
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় নজরুল ইসলাম খান ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-কে সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য একটি অনুসরণীয় ম্যানুয়াল হিসেবে উল্লেখ করেন।
টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিসের পরিচালক জেরেমি নর্থ তাঁর বক্তব্যে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-কে একটি যুগান্তকারী প্রকাশনা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের এমন গোপন নথি প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারেননি।”
হাক্কানি পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর আন্তর্জাতিক সংস্করণ প্রকাশের এবং লন্ডন বইমেলায় এর প্রচারের উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সদস্য এবং বইমেলায় আগত অনেক দর্শক বিপুল উৎসাহের সাথে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।