গত ফেব্রুয়ারী মাসে এইদিনে জীবন-মৃত্যুর সীমানার কাছাকাছি ছিলাম। আল্লাহর রহমত আর পরিবার পরিজন, আত্নীয় স্বজন, দেশ বিদেশে বন্ধু, বান্ধব সর্বোপরি শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়ায় বেঁচে গেছি।
মধ্যরাতে বাসায় হৃদরোগে আক্রান্তের সময় সহধর্মিণী শাম্মী পাশে ছিল। বুকে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছি। তাকে নিয়েই হেটে গেছি অনেকটা পথ। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি, সুরা পড়ছি, যাতে শাম্মী ভয় না পায়। ভাগ্য ভালো প্রেসক্লাবের পাশে একটা প্রাইভেট কার দাঁড় করানোর ইশারা দেয়ায় থেমে ছিল।
অচেনা তিন তরুন সে রাতে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আরো সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। প্রথমে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
হবিগঞ্জ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি করার পরামর্শ দিয়েই খালাস। সে রাতে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি কোটি কোটি টাকার এই বিল্ডিংটি জরুরী চিকিৎসা সেবার জন্য এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা নেই। ইসিজি করতে বুকে ব্যাথা নিয়ে ছুটছি এক ক্লিনিক থেকে অন্য ক্লিনিকে। ক্লিনিকের জরুরী বিভাগের কেউ লেপ ছেড়ে উঠতে নারাজ, আবার কোনটিতে আনাড়ি কর্মীকে বসিয়ে রেখে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা।
যাই হোক সে রাতে পত্রিকার কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরা অনুজ সহকর্মী সহিবুর, কুহিনূর, জাকারিয়া, রুবেল, পাভেল, কবির, আমির হামজাসহ কয়েকজন এগিয়ে এসে ইসিজি করানো থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা পাঠানোর কাজটি করছে ঝড়ের গতিতে। তারা এগিয়ে না এলে হয়তো আমার ছেলে ইশমাম ছোটভাই রিপন অনেকটা সর্ষে ফুল দেখতো।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিসিইউতে অবস্থান ও হার্টে রিং লাগানোর পর আমার রোগমুক্তি কামনা করে ফেসবুকে অনেকেই দোয়া চেয়েছেন। প্রেসক্লাবের নয়া কমিটি মিলাদের আয়োজন করেছেন। জনাব মজিদ খান এমপি থেকে শুরু করে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা খোঁজ খবর নিয়েছেন এই ছাপোষা সংবাদকর্মীর।
আমার কর্মস্থল দেশ রূপান্তরের চীফ রিপোর্টার সুইটি আপা সিনিয়র রিপোর্টার প্রতীক ইজাজ, এএসপি শাহীন মামু, অনুজ সাইফুল, মান্না শত ব্যস্ততা আর ঢাকার অসহ্য যানজট উপেক্ষা করে মগবাজারের বাসায় ব্যাগ ভর্তি পথ্য নিয়ে ছুটে গেছেন। বন্ধু স্বজনদের কেউ কেউ আমাকে হাসপাতালে এক নজর দেখতে গিয়ে সিসিইউতে দায়িত্বরত কর্মচারির ধমক আর চোখ রাঙানি পর্যন্ত সহ্য করছেন। আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ।
হবিগঞ্জে কন্যাদায়গ্রস্থ এক অভাবী মা যখন বলেন, ভাই আপনার সুস্থতার জন্য রোযা আর নফল নামাজ পড়েছি।তখন মনে হয় এখনও পৃথিবী থেকে মায়া দয়া শেষ হয়ে যায়নি। নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারিনা।
সুস্থ হয়ে হবিগঞ্জ আসার পর অনেকেই দেখতে এসেছেন, মোবাইলে খোঁজ খবর নিয়েছেন তাদের নাম লিখে শেষ করতে পারবো না। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাদের প্রতি যারা আমার বিপদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা এবং দোয়া করেছেন আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
Leave a Reply