এখন থেকে অনলাইনেই পাওয়া যাবে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ। যদিও এতদিন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থীদের কাগজপত্র সত্যায়ন এবং সনদ সংগ্রহ ছিল একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর এই কাজে সময়, শ্রম এবং প্রার্থীদের অর্থেরও অনেক অপচয় হতো। এসব দিক বিবেচনায় নতুন বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
সূত্র মতে জটিলতা কমিয়ে শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ প্রদানে আগের নিয়ম পরিবর্তন করে অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ই সার্টিফিকেট বা ই-সনদ প্রদানের সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে সংস্থাটি। এই ব্যবস্থায় প্রার্থীরা ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা নিতে পারবেন। বিশেষ করে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন সেবা প্রার্থী তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তার সনদ ও অন্যান্য সব বিষয়েই অবহিত হতে পারবেন এবং ঘরে বসেই যেকোন সময়েই একজন প্রার্থী তার সনদ প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ইস্কাটন রোডস্থ এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম জানান, শিক্ষক পদের চাকরি প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন ইতঃপূর্বে এনটিআরসিএ থেকে প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রের আবেদন সরাসরি কিংবা ডাকযোগে অথবা বাহক মারফতে প্রেরণ করে ঢাকায় অবস্থিত এনটিআরসিএ’র অফিস থেকে যাচাই-বাছাই করা হতো।
এর ফলে সেবা প্রার্থীদের এবং এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সময় শ্রম ও অর্থের অপচয় হতো। শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়নের বিদ্যমান যাচাই প্রক্রিয়া এখন পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন প্রক্রিয়ায় টেলিটকের অ্যাপসের মাধ্যমে যাচাই করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় সেবা প্রার্থীরা দেশের যেকোনো স্থান থেকে খুবই সহজে তথ্য পেতে পারবেন। এতে সেবা প্রার্থীদের এবং এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সময় শ্রম ও অর্থেরও সাশ্রয় হবে।
এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র প্রস্তুত করে বিতরণের উদ্দেশ্যে প্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র উত্তোলন করেন। উক্ত সার্টিফিকেটগুলো দেশের ৬৪ জেলার জেলা শিক্ষা অফিসার অথবা তার প্রেরিত প্রতিনিধিরা এনটিআরসিএ কার্যালয় হতে সংগ্রহ করেন।
এনটিআরসিএ এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬২ টি প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করেছে বলেও জানা গেছে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে অনলাইনে প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ করে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন এবং নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে।
এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রায় ৩৬ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২১ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে ১০৬টি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে এনটিআরসিএ। প্রয়োজনের তুলনায় দক্ষ শিক্ষকের অনেক ঘাটতি রয়েছে বলেও তারা জানান।
গত বছরের শূন্য শিক্ষকের তালিকায় ৯৬ হাজার শিক্ষকের পদ খালি থাকলেও সেখানে মাত্র ২২ হাজার ২১ জন শিক্ষককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে আবার অনেকে শিক্ষক হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদানও করেননি। সব মিলিয়ে দেখা গেছে মাত্র ১৮ হাজার ৬৪৮ জন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক স্কুল বা কলেজে যোগদান করেছেন। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি থাকলেও সব পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অপর দিকে অনেক বিষয়ের দক্ষ ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান। বিশেষ করে দুটি সাবজেক্টের নাম স্পেসিফিক করে তিনি বলেন, ভৌত বিজ্ঞান এবং আইসিটির মতো দুটি বিষয়ের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার চাহিতা মতো শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ছাড়া অনেক প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ন্যূনতম পাস মার্কও তারা পায় না। প্রার্থীদের ভোগান্তি কমানোর বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে এনটিআরসিএ’র অফিসে কাউকেই আর সশরীরে আসতে হবে না। এখন সব কাজ হবে অনলাইনে। শুধু সনদই নয় এখন থেকে অনলাইনে প্রার্থীদের সব ধরনের কাগজপত্র অনলাইনেই যাচাই-বাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।
আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটেনর কমন সার্ভারে যে কেউ প্রবেশ করে যে কেউ যেকোনো প্রার্থীর আপডেটসহ যাবতীয় সব তথ্য যাচাই করতে পারবেন। এ কারণে আবেদনের সময় প্রার্থী যে ছবি সংযুক্ত করবে সেই ছবি পরিবর্তনের অপশনও বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কাজ হবে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই বিন্দুমাত্র অসততার কোনো সুযোগ আর থাকছে না।