সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশীসহ বিদেশী নাগরিকদের দেশ ছাড়ার জন্য দুই মাসের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
আজ রোববার থেকেই শুরু হচ্ছে সাধারণ ক্ষমার বিশেষ সুযোগ। এটি চলবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়। তাদের ওই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও তুলে দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, অনিয়মিত, আনডকুমেন্টডেট, অবৈধভাবে বসবাসকারী যেসব বাংলাদেশীর ভিসার মেয়াদ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর আগে শেষ হবে শুধু তারাই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরা কোথা থেকে কিভাবে বিশেষ ক্ষমার কার্যক্রম প্রসেসিংয়ের সেবা পাবেন, ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট নিতে তাদের কী কী ডকুমেন্ট লাগবে সেই সব প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও সাধারণ ক্ষমার সুযোগ এলে কারা পাচ্ছেন আর কারা পাচ্ছেন না সেটিসহ মোট ২০টি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে দুবাই কনসাল জেনারেলের দফতর থেকে।
সাধারণ ক্ষমা ২০২৪-এর সেবা কোথায় পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, দুবাইয়ের ভিসাধারীরা আল আভীর ইমিগ্রেশনে এবং অন্য আমিরাতের ভিসাধারীদের সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে যেতে হবে। ইমিগ্রেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউএই সরকার অনুমোদিত টাইপিং তাহসিল/আমের সেন্টারে যেতে হবে। ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিশন নিতে অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশীদের মূল পাসপোর্ট অথবা কন্স্যুলেট অফিস থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ১৫ বছরের কম হলে সেক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক, ফিঙ্গারপ্রিন্টের প্রয়োজন হবে না। কন্স্যুলেট অফিসের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট পাওয়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সংযুক্ত আমিরাতে বর্তমানে অনেক বাংলাদেশীসহ বিদেশী নাগরিক ভিজিট ভিসায় গিয়ে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। অনেকে আবার বাংলাদেশ থেকে ইউএই সরকারের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে দেশটিতে গিয়ে তিন মাসের মধ্যে কর্মসংস্থান ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর তারা বৈধভাবে কাজের সুযোগ পান। আবার অনেকেই দুবাই গিয়ে দালালদের হাতে টাকা দিয়েও কর্মসংস্থান ভিসা সুযোগ নিতে বঞ্চিত হন।
তাদের বেশির ভাগই এখন দুবাই, শারজাহসহ দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বেকার থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপরও দালাল চক্র প্রতিনিয়ত ইউরোপের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভিজিট ভিসায় দুবাই নিচ্ছে প্রথমে। সেখান থেকে তাদের সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালি নেয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে জিম্মি করে বাংলাদেশ থেকে টাকা আদায় করছে অপহরণকারী চক্র। তারপরও অনেকের স্বপ্ন ভূমধ্য সাগরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের স্বপ্ন লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে আটকে আছে।
দুবাই কন্স্যুলেট জেনারেল অফিসের সাধারণ ক্ষমার সুযোগে আরো বলা হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে এক্সিট নিয়ে যে কেউ দেশে গেলে পুনরায় ইউএই আসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না।
জরিমানা মওকুফ ও ভিসা নিয়মিতকরণ কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা/আইডি কপি দাখিল করা হলে জরিমানা মওকুফ করা হবে ছয় মাস মেয়াদি জব সিকারস ভিসা (কর্ম অনুসন্ধান ভিসা) ইস্যু করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিগত বছরগুলোতে লাখ লাখ বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হতো। বাংলাদেশীদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ছিল ইউএই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, শেখ হাসিনা সরকার ওই সময় রাশিয়াকে ভোট দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে দেশটির সরকার মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এরপর তারা বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কর্মী নেয়ার কার্যক্রমই বন্ধ করে দিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর কূটনৈতিক তৎপরতায় ভিজিট ভিসায় কর্মী যাওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় কর্মীরা ঢাকার কাকরাইলের জনশক্তি ব্যুরো থেকে বৈধভাবে ছাড়পত্র নিয়ে দুবাই গিয়ে সেখানে কর্মসংস্থান ভিসায় রুপান্তর করার সুযোগ পান। এই সুযোগে দেশটিতে দুই লাখেরও বেশি কর্মী যাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুবাই গিয়ে কর্মসংস্থান ভিসায় রূপান্তর করতে পারেননি। তাদের অনেকেই এখন দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
এই ভিজিট ভিসার ছাড়পত্র করাতে গিয়ে বিএমইটিতে জালিয়াতি সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছিল। এই চক্রে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা অনেক জাল-জালিয়াতির ঘটনাও ঘটে।
এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল তদন্ত কমিটি। ওই তদন্ত কমিটির তদন্তে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, বিএমইটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও রহস্যজনকভাবে তদন্ত কমিটি থেকে ওই সময়ের মহাপরিচালক শহিদুল আলমের নাম বাদ দেয়া হয়। এ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠে। পরে অবশ্য ডিজির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং জাল-জালিয়াতির অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে। সেই সূত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহিনের কাছে চিঠি দিয়ে ডিজির অনিয়মের সব ডকুমেন্ট চান দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তকারী কর্মকর্তা।