মার্চ পর্যন্ত অর্থ বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান
দেশী-বিদেশী ব্যাংক গ্যারান্টি আরো ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা
পতিত সরকারের বাছবিচারহীন ঋণ নেয়ার কারণে গত অর্থবছরের ৯ মাসেই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ পর্যন্ত সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ কোটি টাকায়। এর সাথে সরকারকে ঋণবহির্ভূত দেশী-বিদেশী ব্যাংক গ্যারন্টি দিতে হয়েছে আরো এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে সব কিছু যোগ করলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মার্চ শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ ছিল ১৮ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের সর্বশেষ ডেট বুলিটিনে এটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত সরকারের বেপরোয়া ঋণ অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে মনে করছে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
অর্র্থ বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২৩-মার্চ ২৪) সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) ঋণ বেড়েছে ৮০ হাজার ১০২ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতির পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ)। চলতি পঞ্জিকা বছরের মার্চ মাস শেষে সরকারের ঋণস্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র (মোট দেশজ উৎপাদন) ৩৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মার্চ শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ১৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মোট পুঞ্জীভূত ঋণের ৫৮ শতাংশ।
২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ছিল ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এটি ছিল জিডিপি’র ২১ দশমিক ২২ শতাংশ।
সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ বেশি। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের গৃহীত পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ কমেছে। পুঞ্জীভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাতে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
অন্য দিকে গত মার্চ শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণস্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ এবং মোট পুঞ্জীভূত ঋণের ৪২ শতাংশ। গত ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এটি ছিল জিডিপি’র ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
অর্থবিভাগ বলছে, এর বাইরে সরকার প্রদত্ত কিছু আর্থিক গ্যারান্টি বা ব্যাংক গ্যারান্টি রয়েছে। গত মার্চ শেষে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিকসহ সরকারের মোট আর্থিক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণে গ্যারান্টির পরিমাণ ৭২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণে গ্যারান্টির পরিমাণ ৩৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি এবং কিছু মেগা প্রকল্পের কারণে সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার নিচে রয়েছে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আগের সরকারের ফেলে যা এই বিশাল অঙ্কের ঋণ যদি নিয়মিত পরিশোধ করা না হয় তবে সেটি হবে বাংলাদেশের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে এই ঋণ অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এসব কারণে আগের সরকারের ঋণের কিছু বিষয় পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। কিছু মেগা প্রকল্পে ঋণ নেয়াও কমিয়ে নেয়া প্রয়োজন।