বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের এ দিনে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মদিন উপলক্ষে বিগত বছরগুলোর মতো এবারো থাকছে না কেন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। আগামীকাল শুক্রবার বেগম জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় সারা দেশে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের পর এবার নতুন এক প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়ার জন্মদিন এলো।
এতদিন তিনি ছিলেন কারাবন্দী অবস্থায়, কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হওয়ায় তিনি নিয়েছেন কারামুক্তির নিঃশ্বাস। মুক্তির পর গত ৭ আগস্ট বিএনপির এক সমাবেশে ভিডিও বক্তৃতায় নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছাও বিনিময় করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়া একটি উজ্জ্বল নাম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৩ সালে তিনি সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। ওয়ান-ইলেভেনের পর মইন-ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাবন্দী করে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সেবার কারাগারে প্রথম জন্মদিন কেটেছে তার। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার অনড় মনোভাবের কারণে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ওই সরকার। পরে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন ও মামলা-হামলার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করে দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্নীতির দুই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে পরিবারের আবেদনে খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়।
তবে সাময়িক মুক্তির পরও খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় কারান্তরীণ ছিলেন। এ সময় অসুস্থতার কারণে তাকে বারবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও সাময়িক মুক্তির শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ‘হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায়’ গত ৮ জুলাই ভোররাতে তাকে ‘ফিরোজা’ থেকে বসুন্ধরার এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসপাতালে থেকেই স্থায়ী মুক্তির সুসংবাদ পান বেগম জিয়া। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির পর বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও জার্মানি এই তিন দেশের যেকোনো একটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে জানা গেছে, বিএনপি এবং বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে টানা ১০-১৫ ঘণ্টা ভ্রমণ করার মতো শারীরিক অবস্থা খালেদা জিয়ার নেই। এ দিক থেকে আকাশপথে স্বল্প দূরত্ব বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তাকে সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে নেয়া হতে পারে। সেখানে শারীরিক অবস্থার উন্নতিসাপেক্ষে বেগম জিয়াকে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
দলীয় চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কেক কাটাসহ কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সবাইকে তার জন্য দোয়া করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।্