বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে হিন্দু ভাইদের ঢাল বানিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে শেখ হাসিনা। যখনই তারা হারতে থাকবে, জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, আন্দোলনে হেরে যাবে তখনই তারা বলবে যে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে।’
তিনি বলেছেন, ‘অথচ শত শত বছর ধরে এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মিলে একসাথে বসবাস করে আসছে। আমরা একে অপরের বাড়িতে বিয়ে, পৌষপার্বণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই। একে অপরের বাড়িতে বাতাসা, ক্ষির খাই। এই যে এক্য, এই এক্যে তারা ফাটল ধরাতে চায়। তারা যত ষড়যন্ত্রই করুক, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে।’
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন প্রায় ১৫ বছর আমরা একটা সৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, ভয়াবহ নির্যতনকারী শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত। আমাদের প্রায় ৭০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। হাজার খানিক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অন্য ইউনিয়নগুলোর মতো এই ইউনিয়নের হাজারও নেতাকর্মী মামলা খেয়েছেন। গণগ্রেফতার করে এই সরকার ১৫ বছর কাটিয়েছে।
প্রায় ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত নির্যাতনের পরেও আপনারা কখনো হাল ছেড়ে দেননি। এবারো আমাদের ছাত্ররা, আমাদের সন্তানেরা যখন আন্দোলন শুরু করল তখন সরকার প্রায় ছয়জনকে হত্যা করেছে। পুলিশ যখন নিরীহ ছেলেদের গুলি চালালো তখন শিক্ষার্থীরা গর্জে উঠল। সান্ধ্য আইন চালু করা হলো। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামল। অসংখ্য ছেলে যখন মারা গেল, তখন তাদের মা-বাবারাও রাস্তায় নেমে এলো। ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ আগস্ট হাজারও নেতাকর্মী বড় মাঠে একত্র হয়ে আন্দোলন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এসবের মধ্যে একটি ঘটনা চোখে পড়েছে, অবিশ্বাস্য। যেটা হলো লাখ লাখ মানুষ, ছেলে, মেয়ে, শিশু, বৃদ্ধ সকলে রাস্তায় নেমে বুক পেতে দিয়ে বলেছে, গুলি কর আমরা রাস্তা ছেরে যাব না। আপনাদের রংপুরের সাঈদের কথা মনে আছে, মুগ্ধর কথা মনে আছে নিশ্চয়। এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের পুলিশ তাদের গুলি করে মারল। যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে আমাদের সাধারণ মানুষজনের ওপরে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে হাসিনা। ৫ তারিখে দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তার দোসরেরা পালিয়েছে, অনেকে পালাতে পারেনি। পালিয়েও লাভ হবে না। আমরা বলেছিলাম, কোন দিকে পালাবে তুমি, কোন দিকে পথ নেই। উত্তরে পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর কোনো পালাবার পথ নেই। আওয়ামী লীগের ওই অবস্থা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহকে অস্বীকার করে জনগণের ওপর যে অত্যাচার করেছে, আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে, আলেম ওলামাদের ফাঁসি পর্যন্ত দিয়েছে। কারাগারে নির্যাতিত করে রেখেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দিনের পর দিন কারাগারে রেখেছে, আমিও কারাগারে ছিলাম অনেকদিন। তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি, পালিয়ে যেতে হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এখন আশ্রয় নিয়েছে দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে, আমেরিকা বলেছে নেবে না। এখন পর্যন্ত ভারতও অফিসিয়ালি আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি, এখন পর্যন্ত তিনি সেখানে আছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন আর মানুষ থেমে থাকে না। হাসিনা সরকার ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা নেই। এই টাকাগুলো তারা বিদেশে পাচার করেছে, আর কিছু টাকা বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কাজে ব্যবহার করছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশ রক্ষায় ছাত্র ভাইদেরকে, যারা এদেশকে রক্ষা করেছে। সেই সাথে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। যারা প্রয়োজনের মধ্যে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়।’
সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশে সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো: শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা যুবদল সভাপতি চৌধুরী মহেবুল্লাহ আবু নুর, সদর থানা সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্যারিস, গড়েয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম শাহ রেদ, সাধারণ সম্পাদক তাশারফ হোসেন স্বরন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: কায়েস, স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মো: সোহেল রানা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারাসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
মির্জা ফখরুল এদিন সন্ধ্যায় রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে আন্দোলনে নিহত চার নেতাকর্মীর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন।