জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পোস্টিং অ্যান্ড ডেপুটেশন (এপিডি অনুবিভাগ) পদের অতিরিক্ত সচিব মো: নাজমুছ সাদাত সেলিমসহ অনেক কর্মকর্তাই গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেককে তাদের দফতরে গিয়েও খুঁজে পাচ্ছেন না। এ সময় কোনো কোনো ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা বলছেন, আসবে কীভাবে? তারা তো সহকর্মীদের সাথে দিনের পর দিন অন্যায় করেছেন। এখন পরিস্থিতি অনুকূলে নেই বুঝতে পেরে ভয়ে অফিস ছেড়েই পালিয়ে গেছেন। ৬ তারিখ থেকেই এসব কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছেন, এপিডি নাজমুস সাদাত সেলিমসহ এ মন্ত্রণালয়ে গড়ে ওঠা শক্তিশালী চক্র বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জায়গায় শুধু বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, যা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করলেই অনিয়ম দুর্নীতির নেপথ্যে তথ্যগুলো বেরিয়ে আসবে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি, এ চক্রটি যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রমোশন বন্ধ এবং ওএসডি করে রাখছিলেন। এখন আবার ওই সুযোগ-সন্ধানী কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিজেদের ‘বঞ্চিত কর্মকর্তা’ দাবি করে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবের পদ বাগিয়ে নেয়ার ফন্দি আঁটছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুস সাদাত সেলিমের রুমে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত বেশকিছু কর্মকর্তা তার রুমে বসে আছেন। কিন্তু নাজমুস সাদাত সেলিমের চেয়ারখালী পড়ে আছে। তার অফিস সহকারীর চেয়ারে বসা ব্যক্তি ব্যস্ত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিতে। পাশের কম্পিউটার রুমে ব্যাচভিত্তিক কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি এবং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নেয়ার কাজ করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় অনেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় সুবিধাবঞ্চিত অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাকে দেখতে পেয়ে একজন আরেকজনের কাছে জানতে চাচ্ছিলেন, ‘উনি কেন এ ভবনে ঘোরাঘুরি করছেন? আরেকজন তখন বলেন, আগেও খেয়েছে এখন আবার এসেছেন খেতে! এতো সোজা নয়। সব হিসাব নেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া একজন নারী কর্মকর্তা পদোন্নতির তালিকায় তার নাম লেখাতে মন্ত্রণালয়ে আসেন। তার মতো আরো অনেকেই আসেন। এ সময় তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডিসহ চিহ্নিত কর্মকর্তাদের রুমে ঢোকার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বেশির ভাগ কর্মকর্তার রুম বন্ধ, নয়া চেয়ার ফাঁকা দেখতে পান। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করা একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। অথচ আজকে যারা পদে বসে আছেন তারা বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামাই নিয়ে গেছেন। এখন ভয়ে অফিসে আসছেন না।
এ সময় এক নারী কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ওদের আর খুঁজে পাবেন না। ওরা সবাই পালিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এপিডি নাজমুছ সাদাত সেলিম এ পদে যোগ দেয়ার আগে কুয়ালালামপুরের মালয়েশিয়া হাইকমিশনের মিনিস্টার লেবার পদের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে থাকার সময় মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের সত্যায়ন দেয়ার নামে তার সহযোগীরা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা কামাই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (এপিডি অনুবিভাগ) নাজমুছ সাদাতের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।