প্রথম আলো একটি সাহসী কলাম ছাপিয়েছে। সাধারণত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদ লেখা কঠিন এবং বিব্রতকর। সাংবাদিকদের “ক্ষমতার ক্ষুধা” বিষয়ক লেখায় তেলবাজ সাংবাদিকদের ধুয়ে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা কোনোকালেই ক্ষমতাবান নন, অথচ তারা ক্ষমতাবানদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান। এই সত্যটা বুঝতে সাংবাদিকরা যতবার ভুল করেছেন একটি সমাজ, একটি দেশ ততবারই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে।
সত্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী কিছু হতে পারে না। সেই সত্যকে আমরা তুলে ধরছি না ক্ষমতার লোভে, ক্ষমতবানদের কাছাকাছি হওয়ার লোভে। ইনফরমেশন হচ্ছে সবচেয়ে পাওয়ারফুল, এমনকি অস্ত্রের চেয়েও পাওয়ারফুল। আপনার কাছে ইনফরমেশন আছে, আপনি একজন সাংবাদিক, সেই ইনফরমেশন আপনি জাতীকে জানাচ্ছেন না, আপনার বোবা কান্না করা উচিৎ, অথচ আপনি দাঁত বের করে হাসছেন। সেই হাসিটা ক্ষমতাবান হওয়ার জন্য, ক্ষমতাবানদের খুশি করার জন্য।
ক্ষমতার ক্ষুধা আপনাকে এতোটাই পাগল বানিয়ে ফেলেছে যে, আপনি দিব্বি মিথ্যা কথা প্রচার করেই চলেছেন। বৈশ্বিক ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সাংবাদিকরা কোনো সময়ই ক্ষমতাবান নয়। তাদেরকে মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। আপনার বুঝার ক্ষমতা নাই, সেটা আপনার ব্যর্থতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলাকে যেভাবে আমরা ঘৃণা করি, এরচেয়ে বেশি ঘৃণা করি পাকির মতো গুলি করে মানুষ হত্যাকে।
আপনি ভাংচুরের সংবাদ ফলাও করে প্রচার করতে লাগলেন, অথচ হত্যাকান্ডের শিকার ৫৫ শতাংশ মানুষই যে ১৮ বছরের নিচের কচি প্রাণ সেটা আপনি প্রচার করলেন না, রাজধানীেতে গ্রেফতারকৃত ৮৭ শতাংশেরই যে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ই নেই সেটা আপনি জাতীকে জানালেন না, গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন (সরকার বলছে ১৫০জন, দৈনিক নয়া দিগন্ত ২৬৬ জনের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে, আল জাজিরা বলছে আরও বেশি) তারা কতজন বিএনপি বা তাদের অংগ সংগঠনের কর্মী, জামায়াত-শিবিরের কর্মী তা প্রকাশ করা দায়িত্ব মনে করলেন না, আপনি নির্ভেজালভাবে মিথ্যার উপরে আছেন।
ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৮শ গুলিবিদ্ধ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করাও জরুরী মনে করলেন না। যারা ফ্রন্ট লাইনে আন্দোলন করেছে তারাই বেশির ভাগ নিহত ও আহত হয়েছেন। আহত ও নিহতরা কত শতাংশ রাজনৈতিক কর্মী সেটা প্রকাশ করেন। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে আন্দোলনটা রাজনৈতিক ছিল না কি মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য গণছাত্র আন্দোলন ছিল।
আপনি বিজ্ঞাপনের মতো মিথ্যা প্রচার করেই চলেছেন, আপনারা সাংবাদিক না হয়ে, সংবাদপত্রের মালিক না হয়ে, টিভি মিডিয়ার মালিক না হয়ে অন্য কিছু হওয়া উচিৎ ছিল। গত বুধবার মার্চ ফর জাস্টিস প্রোগ্রামে হাজারো শিক্ষার্থী হবিগঞ্জের রাস্তায় ছিল। সারা দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী মাঠে নেমে এসেছিল। আমি তো দেখেছি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীরাও সেখানে ছিল।
গর্ব করে মা বাবারা তাদের সন্তানদেরকে মিছিলে পাঠিয়েছেন। মা বাবারা জানতেন হয়তো তাদের সন্তান আর ফিরে নাও আসতে পারে। কিন্তু পাঠিয়েছেন। সেই আবেগটা আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার মিথ্যা প্রচারণা মার্কেট পাচ্ছে না। আন্দোলনটা রাজনৈতিক হলে সরকার ধুলোয় মিশিয়ে দিত। সারা দেশে ১১ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হল, শতশত মানুষকে খুন করা হল, কই, মানুষকে তো ভয়ের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না, ঘরে বসিয়ে রাখা যাচ্ছে না, সাজোয়া যানে মানুষ ভয় পাচ্ছে না। আপনি বলছেন চলমান এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে এতো তারিখ, অনেক পরীক্ষার্থী বলছে ছাত্র ভাইবোনদের রক্তের উপর দাড়িয়ে তারা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত না।
এসব স্পিরিটটাকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আইনজীবী ও সাংবাদিক মানজুর আল মতিন বলেছেন- সন্তানদের রক্ষার জন্য তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেছেন- যে পরিস্থিতি চলছে তাতে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকানা শিক্ষকগন ব্যতিত সবাই ছাত্রদের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে অনেক সত্য গোপন করা হচ্ছে। যাদের সত্য প্রচার করার কথা তারা জেনে শুনে অন্ধ। জেনে শুনে অন্ধ হওয়া খুব ভয়ংকর।
এম এ মজিদ
আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ, ২ আগষ্ট ২০২৪ ইং