রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিজত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দুই দফায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটানায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ পুরো মহানগরীতে। সতর্ক অবস্থায় টহল অব্যাহত রেখেছেন বিজিবি। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এদিকে গায়েবানা জানাজা শেষে আন্দোলনকারীরা ভিসিসহ প্রশাসনের পদত্যাগ, সাঈদের ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবি দিয়েছে। তারা আবু সাঈদ চত্বর ও গেটের উদ্বোধন করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় পৃথক মামলা করবে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি। বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে নগরীর সীমান্ত এলাকাগুলোতে।
সাঈদের দাফন সম্পন্ন
বুধবার (১৭ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের দাফন হয় সকাল সোয়া ১০টায় পীরগঞ্জের বাবনপুরে পারিবারিক কবরস্থানে। এর আগে জাফর পাড়া কামিল মাদরাসা মাঠে দুই দফা জানাজায় বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী, সহপাঠী আন্দোলনকারীরা ছাড়াও হাজার-হাজার মানুষ তার জানাজায় অংশ নেয়।
জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কলা অনুষদের ডিন ড. শফিক আশরাফ, সাবেক ডীন ও বাংলা বিভাগের প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদসহ শিক্ষকরাও অংশ নেন। প্রথম জানাজায় ইমামতি করেন মরহুম আবু সাঈদের ভাতিজা আবু সিয়াম মিয়া। সাঈদের মৃত্যুতে ওই এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হন সাঈদ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাঈদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী। সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। ৯ ভাই বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন সাঈদ।
ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবি, সাঈদ চত্বর ও গেটের উদ্বোধন শিক্ষার্থীদের
এদিকে বেলা সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসে আবু সাঈদের গায়েবানা জানাজার ঘোষণা থাকলেও সেই সময় এগিয়ে আনে আন্দোলনকারীরা। দুপুর ২টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করে। পরে প্রধান ফটকের সামনে গায়েবানা জানাজা হয়। জানাজার আগে আন্দোলনকারীরা ৬ দফা দাবি জানান।
তারা বলেন, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির সাথে এই ৬ দফা দাবিতেও মাঠে আন্দোলন চলবে। তারা জানান, আবু সাঈদের পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ, ব্যর্থতার দায়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ, প্রধান ফটকের নামকরণ আবু সাঈদ গেট, পার্কের মোড়েরে নাম আবু সাঈদ চত্বর এবং হল খুলে দেয়ার দাবি জানান।
পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও ১ নম্বর ফটকে আবু সাঈদ গেট ও পার্কের মোড়ে আবু সাঈদ চত্বর নামের ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়ে এর উদ্বোধন করেন।
ভিসির ঘোষণা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদের নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়। ভিসি নিহতের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহতের ঘটনায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মো: হাসিবুর রশীদ।
আন্দোলন অব্যাহত
বুধবারও সারাদিন রংপুর মহানগরীর বুড়িরহাট, দেউতি, মিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন। সেখানে তারা আবু সাঈদসহ নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হত্যাকারীদের বিচার এবং অবিলম্বে কোটা সংস্কারের একদফা দাবি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। নইলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।