হবিগঞ্জ শহরের বায়তুল আমান জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মুফতি আলমগীর হোসেন সাইফী বলেছেন- ১৪শ বছর আগে রাসুল (সা) বলেছেন- একজন ঈমানদারের লক্ষন হচ্ছে সে কম কথা বলবে, কম খাবে, কম ঘুমাবে।
বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন- কম কথা বলা মানুষগুলো সাধারণত ভাল হয়, কম খাদ্য গ্রহনকারী ব্যক্তিরা তুলনামুলক বেশি সুস্থ থাকে, যারা কম ঘুমায়, রাতের প্রথমার্ধে ঘুমায় এবং বেশি সময় কাজে নিয়োজিত থাকে তারা বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে রক্ষা পায়। তিনি বলেন- রোযা একটি শারিরিক ইবাদত।
রোযার মাধ্যমে শরীরের অনেক ভিকটেরিয়া ধ্বংস হয়, অনেক অপ্রয়োজনীয় কোষগুলোর কার্যকারিতা হারায়। তিনি কোরআন হাদিসের পাশাপাশি মিশরের কায়রোর একটি রিসার্স সেন্টার, বৃটেনের একজন গবেষকের, বাংলাদেশের একটি গবেষান দলের তথ্য তুলে ধরে বলেন- রোযা রাখলে মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।
মুফতি সাইফী বলেন- আমরা কোরআন হাদিস দিয়ে কথা বললে মানুষ শুনে না, একজন ডাক্তার যখন আমাদের কথাগুলোই বলেন- তখন মানুষ শুনে। ডাক্তার বলেছে- উপবাস থাকলে আপনার অমুক রোগ কমে যাবে, মানুষ উপবাস থাকে, আমরা বলি রোযা রাখলে আপনার সওয়াবও হবে, রোগও কমবে। তখন মানুষ রোযা রাখতে চায় না। বিশেষ ক্ষেত্রে রোযা মানুষের উপর শিতিল করা হয়েছে। শিশু কিংবা পাগলের উপর রোযা ফরজ নয়। কেউ যদি অসুস্থ হয় তার জন্য রোযা রাখা ফরজ নয়, পরে সে কাযা রোযা রাখলেই হবে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য, মা খাবার না খেলে দুগ্ধপোষ্য শিশুর ক্ষতি হতে পারে এ ধরনের মায়েরা রমজানে রোযা না রেখে পরে সুবিধা মতো সময়ে রোযা রাখতে পারবে। মুসাফিরের জন্য রোযা শিতিল করা হয়েছে।
তবে বদলী রোযা রাখার বা রাখানোর কোনো বিধান নেই। মুফতি আলমগীর হোসেন বলেন- কোনো প্রথা যদি সাধারন মানুষের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে প্রথা বাদ দিতে হবে। রমজানে শশুর বাড়ি থেকে ইফতারী দেয়া একটা বাজে প্রথা। এ প্রথা পালন করতে গিয়ে অনেকে সুদের উপর টাকা এনে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠিয়েছেন। ইফতারী না পাঠালে শাশুরিরা বউকে লজ্জা দেয়। এমন নির্লজ্জতা পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন- ধনী গরিব সবারই শশুর বাড়ির ইফতারী প্রথা পরিহার করতে হবে।
কারণ ধনীর বাড়ি থেকে ইফতারি আসলে পাশের গরীব বাড়ির বধুরা তাদের বাবার বাড়ি থেকে ইফতারি না আসার কারণে লজ্জা পায়। তিনি এসময় মুসল্লীদের শশুর বাড়ির ইফতারকে না বলুন বলে তিনবার শপথ পড়ান। ২৮ মিনিটের জুমার খুৎবায় মুফতি আলমগীর হোসেন সাইফী ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানসহ বিশ্বের মুসলমানদের শান্তি কামনা করেন। জুমার নামাজের পূর্বে বায়তুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি এডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন- মসজিদ নির্মাণে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে তিন চতুর্থাংশ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। সকলের সহযোগিতায় তা করা হবে। এসময় তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলেয়া জাহিরের পক্ষ থেকে মসজিদের সিড়ির টাইলস লাগানো বাবদ ২৫ লাখ টাকা সরকারী অনুদানের ঘোষনা দেন। শীঘ্রই মার্বেল পাথর দিয়ে সিড়ির কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে সংসদ সদস্য মোঃ আবু জাহির টিনের তৈরী বায়তুল আমান মসজিদের শুরু থেকে বর্তমানের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন দৃষ্টি নন্দন মসজিদের ইতিহাস তুলে ধরেন।
লেখক
এম এ মজিদ
সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবি
হবিগঞ্জ, ৩০ মার্চ ২০২৪
০১৭১১-৭৮২২৩২